৩৬ প্রিলি ::: আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলী
Topic ::: বৈশ্বিক ইতিহাস .... (৪ নম্বর)
Topic ::: বৈশ্বিক ইতিহাস .... (৪ নম্বর)
প্রতিবাদ অন্যায়কে পরিবর্তন করার ভাষা। প্রতিবাদের মাধ্যমে পরিবর্তন সাধিত হয় সমাজে, সমাজ থেকে রাষ্ট্রে। আসুন দুনিয়া কাঁপানো কিছু প্রতিবাদ (বিশ্বস্মরণীয় বিপ্লব) সম্পর্কে জেনে নিই:
**** মার্টিন লুথার কিংয়ের বিখ্যাত I have a dream ভাষণ ****
১৯৬৩ সালে মার্টিন লুথার কিং কিং এই বৈষম্যমূলক আইনের বিরূদ্ধে আন্দোলন ঘোষনা করেন। কিং তার অনুসারীদের নিয়ে দুইমাস ব্যাপী আন্দোলন চালিয়ে যান, আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল আলাবামাতে কালোদেরকেও সাদাদের সমান অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে হবে, কালোদের সর্বত্র প্রবেশাধিকার থাকতে হবে, শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে।এমনি এক শান্তিপূর্ন প্রতিবাদ সমাবেশে আলাবামার পুলিশ সেই সমবেত জনতার উপর দমনমূলক নীপিড়ন চালায়, পুলিশ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জলকামান, টিয়ার গ্যাস, কুকুর লেলিয়ে দেয়াসহ সব রকম অত্যাচার করে সেই শান্তিকামী কালো জনতার উপর, শিশুরাও রেহাই পায়নি এর থেকে। মার্টিন লুথার কিং সহ আরও অনেকেই গ্রেফতার হন। এই ঘটনা খুব ব্যাপক সাড়া জাগায় সারা বিশ্বব্যাপী।
সকল নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬৪ সালের ২৮শে অগাস্ট দাসপ্রথা বিলুপ্তির ১০০ বছর পূর্তিতে অগুনতি মানুষের সমাগম হয় ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সামনে। সাদা কালো সকল বর্ণের মানুষ এসেছিল সেদিন ঐ শান্তিপূর্ন প্রতিবাদ সমাবেশে কারন এই সমাবেশ ছিল কালোদের স্বাধীনতা বা মুক্তি এবং চাকুরীর নিশ্চয়তা সম্পর্কিত, এই সমাবেশে আমেরিকার দক্ষিনী রাজ্যের দুঃখী কালো মানুষদের হয়ে বক্তৃতা করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং। ডঃ মার্টিন লুথার কিং ঐদিন তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ, পৃথিবী শ্রেষ্ঠ বক্তৃতা করেন, যা কিনা ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ নামে খ্যাত।
এই ভাষণে তিনি বলেছিলেন, কিভাবে বর্ণবৈষম্য গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, শুধু কালো আমেরিকানদের জীবনকে নয়। এরপর তিনি তুলে ধরেন ভবিষ্যতের আমেরিকা নিয়ে তার আশাবাদকে, যেখানে সব আমেরিকান হবে সমান। এটাই হবে সত্যিকারের স্বপ্নের আমেরিকা। ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ শিরোনামের ওই ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে যে একদিন জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে, সাবেক দাসের সন্তান আর সাবেক দাস-মালিকের সন্তান একসঙ্গে ভ্রাতৃত্বের আসনে বসতে সক্ষম হবে। আমার একটি স্বপ্ন আছে যে একদিন, এমনকি মিসিসিপি স্টেটে যে ছটফট করছে অবিচারের উত্তাপে, যে ছটফট করছে নিষ্পেষণের উত্তাপে, সেটিও পাল্টে গিয়ে হয়ে উঠবে মুক্তি আর ন্যায়ের মরূদ্যান। আমার একটি স্বপ্ন আছে যে আমার ছোট চারটি সন্তান একদিন এমন একটি জাতির মধ্যে বসবাস করবে, যেখানে গায়ের রং দিয়ে আর তাদের বিচার করা হবে না, করা হবে চরিত্রগুণ দিয়ে। এই ভাষণের প্রভাবেই ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার আইন ও ১৯৬৫ সালে ভোটাধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়।আমেরিকা থেকে কাগজে কলমে, রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি ক্ষেত্রে বর্ণ বৈষম্য দূর হয়েছে। এই মানুষটি মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই শান্তিতে নোবেল প্রাইজ পান ১৯৬৪ সালে।
*********** তিয়েনআনমেন স্কয়ার ***********
১৯৮৯ সালের জুন মাসে কমিউনিস্ট চীন কেঁপে উঠে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে। এর আগে ১৫ এপ্রিল নিহত হন চীনের সুশীল সমাজের অন্যতম অগ্রনায়ক ও সরকারবিরোধী বুদ্ধিজীবী হু ইয়াওবাং । তার মৃত্যুর পর থেকেই ছাত্র, জনতা ও পেশাজীবীরা প্রতিবাদ জানাতে থাকে বিভিন্ন ভাবে। জুন মাসে রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে এ বিক্ষোভের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এই সময়ে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে জমায়েত হয়ে উদার নীতির আদর্শে উদ্ভাসিত প্রায় ১০ লাখ ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষ চীন সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ জানায়। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে চীন সরকার সামরিক আইন জারি করে কঠোর দমননীতির আশ্রয় নেয়। অনুমান করা হয়, চীন সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রায় কয়েক হাজার প্রতিবাদী মানুষকে সে দিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে হয়েছিলো।
১৯৮৯ সালের জুন মাসে কমিউনিস্ট চীন কেঁপে উঠে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে। এর আগে ১৫ এপ্রিল নিহত হন চীনের সুশীল সমাজের অন্যতম অগ্রনায়ক ও সরকারবিরোধী বুদ্ধিজীবী হু ইয়াওবাং । তার মৃত্যুর পর থেকেই ছাত্র, জনতা ও পেশাজীবীরা প্রতিবাদ জানাতে থাকে বিভিন্ন ভাবে। জুন মাসে রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে এ বিক্ষোভের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এই সময়ে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে জমায়েত হয়ে উদার নীতির আদর্শে উদ্ভাসিত প্রায় ১০ লাখ ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষ চীন সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ জানায়। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে চীন সরকার সামরিক আইন জারি করে কঠোর দমননীতির আশ্রয় নেয়। অনুমান করা হয়, চীন সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রায় কয়েক হাজার প্রতিবাদী মানুষকে সে দিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে হয়েছিলো।
********** বার্লিন দেয়াল ভাঙ্গার ডাক **********
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে আলাদা হয়ে গিয়েছিলো জার্মানি। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির রাজনৈতিক ভিন্নতার প্রতীক বার্লিন দেয়াল নির্মিত হয়েছিলো ১৯৬১ সালে বার্লিনের মাঝখান দিয়ে। দেয়াল তুলে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিলো সাধারণ জার্মানদের আশা আকাঙ্ক্ষাকে। রাজনৈতিক ভিন্নতার স্বীকার হয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে মুখ দেখাদেখি হয়েছিলো বন্ধ। আশির দশকের শেষ দিকে পূর্ব জার্মানি নিজেদের রাজনৈতিক নীতির উদারীকরণ শুরু করে। ১৯৮৯ সালে সমগ্র পূর্ব ইউরোপে যখন উদার নীতির জয়গান চলছে, ঠিক তখনই পূর্ব জার্মানি পশ্চিমের সঙ্গে সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে বছরের ৯ নভেম্বর হাজার হাজার জার্মান বার্লিন দেয়ালের কাছে জড়ো হয়ে দেয়ালটি ভেঙ্গে ফেলতে উদ্যত হয়। তারা দেয়ালের ওপর উঠে নেচে-গেয়ে ২৮ বছরের বিচ্ছেদের প্রতিবাদ জানায়। ভেঙে ফেলে সেই বিচ্ছেদের সৌধ। পরের বছর ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে দুই জার্মানির মধুর মিলন ঘটে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে আলাদা হয়ে গিয়েছিলো জার্মানি। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির রাজনৈতিক ভিন্নতার প্রতীক বার্লিন দেয়াল নির্মিত হয়েছিলো ১৯৬১ সালে বার্লিনের মাঝখান দিয়ে। দেয়াল তুলে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিলো সাধারণ জার্মানদের আশা আকাঙ্ক্ষাকে। রাজনৈতিক ভিন্নতার স্বীকার হয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে মুখ দেখাদেখি হয়েছিলো বন্ধ। আশির দশকের শেষ দিকে পূর্ব জার্মানি নিজেদের রাজনৈতিক নীতির উদারীকরণ শুরু করে। ১৯৮৯ সালে সমগ্র পূর্ব ইউরোপে যখন উদার নীতির জয়গান চলছে, ঠিক তখনই পূর্ব জার্মানি পশ্চিমের সঙ্গে সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে বছরের ৯ নভেম্বর হাজার হাজার জার্মান বার্লিন দেয়ালের কাছে জড়ো হয়ে দেয়ালটি ভেঙ্গে ফেলতে উদ্যত হয়। তারা দেয়ালের ওপর উঠে নেচে-গেয়ে ২৮ বছরের বিচ্ছেদের প্রতিবাদ জানায়। ভেঙে ফেলে সেই বিচ্ছেদের সৌধ। পরের বছর ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে দুই জার্মানির মধুর মিলন ঘটে।
************** মিসরে আরব বসন্ত ************
হোসনি মোবারক সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য মূল্য, অসীম বেকারত্ব মিসরীয়দের দারুণ হতাশার জন্ম দেয়। সেই হতাশার সর্বোচ্ছ বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারী। রাজধানী কায়রোর কেন্দ্রে অবস্থিত তাহরির স্কয়ারে জমায়েত হয় মোবারক বিরোধী লাখ লাখ জনতা। প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই বিক্ষোভ। পরাজিত হন স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক। পরবর্তীতে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
হোসনি মোবারক সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য মূল্য, অসীম বেকারত্ব মিসরীয়দের দারুণ হতাশার জন্ম দেয়। সেই হতাশার সর্বোচ্ছ বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারী। রাজধানী কায়রোর কেন্দ্রে অবস্থিত তাহরির স্কয়ারে জমায়েত হয় মোবারক বিরোধী লাখ লাখ জনতা। প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই বিক্ষোভ। পরাজিত হন স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক। পরবর্তীতে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
******** ডান্ডি পদযাত্রা বা লবন সত্যাগ্রহ *********
১৯৩০ সালের ১২ মার্চ ডান্ডি পদযাত্রা বা লবন সত্যাগ্রহ শুরু হয়। এই সত্যাগ্রহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লবণ পদযাত্রা ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশদের একচেটিয়া লবণ নীতির বিরুদ্ধে একটি অহিংস করপ্রদান-বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন। ১৯২০-২২ সালের অসহযোগ আন্দোলনের পর লবণ সত্যাগ্রহই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠিত ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন। ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস "পূর্ণ স্বরাজ" প্রস্তাব গ্রহণ করার অব্যবহিত পরেই এই সত্যাগ্রহের সূচনা ঘটে। মহাত্মা গান্ধী আমেদাবাদের কাছে তাঁর সবরমতী আশ্রম থেকে ডান্ডি পদযাত্রা শুরু করে ২৪ দিনে ২৪০ মাইল (৩৯০ কিলোমিটার) পথ পায়ে হেঁটে ডান্ডি গ্রামে এসে বিনা-করে সমুদ্রের জল থেকে লবণ প্রস্তুত করেন। বিরাট সংখ্যক ভারতীয় তাঁর সঙ্গে ডান্ডিতে আসেন। ১৯৩০ সালের ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টার সময় গান্ধীজি লবণ আইন ভেঙে প্রথম লবণ প্রস্তুত করেছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁর লক্ষাধিক অনুগামীও লবণ আইন ভেঙে ভারতে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করলেন। এই আন্দোলনের ফলে ভারতের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ব্রিটিশদের মনোভাব অনেকটাই বদলে যায়।
১৯৩০ সালের ১২ মার্চ ডান্ডি পদযাত্রা বা লবন সত্যাগ্রহ শুরু হয়। এই সত্যাগ্রহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লবণ পদযাত্রা ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশদের একচেটিয়া লবণ নীতির বিরুদ্ধে একটি অহিংস করপ্রদান-বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন। ১৯২০-২২ সালের অসহযোগ আন্দোলনের পর লবণ সত্যাগ্রহই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠিত ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন। ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস "পূর্ণ স্বরাজ" প্রস্তাব গ্রহণ করার অব্যবহিত পরেই এই সত্যাগ্রহের সূচনা ঘটে। মহাত্মা গান্ধী আমেদাবাদের কাছে তাঁর সবরমতী আশ্রম থেকে ডান্ডি পদযাত্রা শুরু করে ২৪ দিনে ২৪০ মাইল (৩৯০ কিলোমিটার) পথ পায়ে হেঁটে ডান্ডি গ্রামে এসে বিনা-করে সমুদ্রের জল থেকে লবণ প্রস্তুত করেন। বিরাট সংখ্যক ভারতীয় তাঁর সঙ্গে ডান্ডিতে আসেন। ১৯৩০ সালের ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টার সময় গান্ধীজি লবণ আইন ভেঙে প্রথম লবণ প্রস্তুত করেছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁর লক্ষাধিক অনুগামীও লবণ আইন ভেঙে ভারতে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করলেন। এই আন্দোলনের ফলে ভারতের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ব্রিটিশদের মনোভাব অনেকটাই বদলে যায়।
No comments:
Post a Comment