Tuesday, 19 January 2016

৩৬ লিখিত ৩ঃ বাংলাদেশ বিষয়াবলি + আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি by Samad Azad [Admin, BCS: Our Goal [Largest Job group of Bangladesh]]

লিখিত প্রস্তুতি :: বাংলাদেশ + আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি

সম্ভাব্য প্রশ্ন :

১। বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডর কী? সিল্ক রুট কী? বিসিআইএম এর রুটটি কেমন হবে?
২। বিসিআইএম গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? এটি গঠনের উদ্যোগ ও প্রেক্ষাপট আলোকপাত করুন।
৩। আপনি কী মনে করেন বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক জোনের একটি হতে যাচ্ছে বিসিআইএম? কীভাবে?
৪। বিসিআইএম বা নয়া সিল্ক রুট এর কৌশলগত গুরুত্ব কী? কেন বাংলাদেশের জন্য বিসিআইএম বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হবে?
৫। বিসিআইএম গঠনে আশঙ্কা, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত এবং করণীয় সম্পর্কে লিখুন।
.
=====================
সম্পর্কিত বিষয় (Related Topics): সিলেবাসে একাধিকবার উল্লেখকৃত ।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি = Economy, Foreign Policy and External Relations (Economic Diplomacy, International Trade).
আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি = International Economic Relations (International trade, Free trade).
আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি = Section C: Problem-solving (Trade)
=====================
কেন প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মনে হচ্ছে?
* "বাংলাদেশের নির্বাচনকে ভারত সমর্থন দেয়ার বড় একটি কারণ হচ্ছে বিসিআইএম"-এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম আহমেদ যুগান্তরকে বলেন ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪।
* আঞ্চলিক জোট বিসিআইএম নিয়ে ঢাকায় সেমিনার। "অর্থনৈতিক করিডর হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।"
সুত্রঃ প্রথম আলো, ৩০ এপ্রিল ২০১৫
* নয়া সিল্ক রুট – খুলে যাচ্ছে সম্ভাবনার দরজা।
সুত্রঃ sonelablog, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ (প্রিলির ঠিক পূর্বে)
* ২০১৫ সালের জুনে ভারতে বিসিআইএম নিয়ে পরবর্তী বৈঠক হবে। (লিখিত এর পূর্বে)
=====================
.
---------------------------------
★ বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডর কী?
---------------------------------
বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারকে নিয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক জোট হলো বিসিআইএম। নতুন এ উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ধারণাটি বাংলাদেশ-চায়না-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার’ (বিসিআইএম) নামেই অধিক পরিচিত।
.
বিসিআইএম করিডর একটি মাল্টি মডেল কানেকটিভিটি। বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের সঙ্গে কানেকটিভিটি।এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এ করিডর অর্থনীতি ও বাণিজ্য ছাড়াও চার দেশের মানুষের মধ্যে নিবিড় সংযোগ স্থাপন করবে।
.
গত বছরের ডিসেম্বরে চারটি দেশের প্রতিনিধিরা চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে মিলিত হয়ে এ ব্যাপারে একটি চূড়ান্ত রূপরেখা প্রণয়ন করে।প্রস্তাবিত বিসিআইএম করিডরটির আওতায় চীনের ইউনান প্রদেশ, বাংলাদেশ, মায়ানমার ও ভারতের সাড়ে ১৬ লাখ বর্গকিলোমিটারের বিশাল এই অঞ্চলের ৪৪ কোটি মানুষের পাশাপাশি থাকবে সড়ক, জল এবং আকাশ পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডর বিসিআইএম-এর বিষয়ে একমত হয়ে এ সংক্রান্ত এক চুক্তিপত্রে সই করেছে ওই চারটি দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা। ২০১৫ সালের জুনে ভারতে পরবর্তী বৈঠকে বিসিআইএম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে এবং এবারের আলোচনা সিদ্ধান্ত আকারে রূপ নেবে।
.
---------------------------------
★ সিল্ক রুট কী?
---------------------------------
কানেকটিভিটির মাধ্যমে এশিয়ার এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। আফগানিস্তান থেকে সওদাগররা উপমহাদেশে এক সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। মধ্য এশিয়া থেকে উপমহাদেশ হয়ে চীন পর্যন্ত বাণিজ্য বিস্তৃত ছিল। তখন এ রুটে পণ্য বলতে সিল্কের আনাগোনা ছিল। সে কারণে মধ্য এশিয়া থেকে উপমহাদেশ হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ রুট ইতিহাসে সিল্ক রুট’ নামে পরিচিত।
.
---------------------------------
★ উদ্যোগ ও প্রেক্ষাপট?
---------------------------------
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকার দুই হাজার বছরের পুরনো সিল্ক রুট চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমার ও চীনের রেল যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতেই তখন এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পরে নানা কারণে সে উদ্যোগ থেমে গেলেও ১৯৯৯ সালে চীনের নেতৃত্বে আবারো সিল্ক রুট চালুর উদ্যোগ নেয় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। আর এটি বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনাম। চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য কক্সবাজার, টেকনাফ হয়ে মিয়ানমারের আকিয়াব, মান্ডালায়ে হয়ে তা কুনমিং পর্যন্ত পৌঁছানোই হল এ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য। এর জের ধরেই বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোরের জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ গঠন করে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীন।২০১৩ সালের মে মাসে বিসিআইএমের আওতায় ইকোনমিক করিডোর গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়।
.
---------------------------------
★ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী?
---------------------------------
১। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সম্মেলনে চার অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে 'প্রধান টার্গেট' ধরে আলোচনা হয়েছে।
২। চার দেশের মানুষের মধ্যে নিবিড় সংযোগ স্থাপন করবে।
৩। ছাড়াও গঠনের উদ্দেশের মধ্যে রয়েছে - জ্বালানি সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, বাণিজ্য সহজীকরণ, শুল্ক কমানো, নন-ট্যারিফ বাধা দূর, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও জনসাধারণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়, দারিদ্র্য বিমোচন, তথ্যপ্রযুক্তি খাত।
.
---------------------------------
★ এর রুটটি কেমন হবে?
---------------------------------
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে আলোচনার সময়ই মূলত রুটটি ঠিক করা হয়। চারটি দেশই রুটটির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। রুটটি হল- চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের রাজধানী কুনমিং থেকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম হয়ে ভারতের কলকাতা। রুট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে কলকাতা থেকে যশোরের বেনাপোল হয়ে ঢাকা। এরপর সিলেট হয়ে শিলচর, ইমপাল-কা-লে-মান্দালাই-রুইলি, তেংচং-ইরাই লেক, ডালি হয়ে কুনমিং গিয়ে শেষ হবে।
.
---------------------------------
★ বিসিআইএমে রফতানির জন্য ১৫টি পণ্য শনাক্ত:
---------------------------------
বিসিআইএম অঞ্চলে রফতানির জন্য ১৫টি পণ্যকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রয়েছে শস্যকণা, চামড়া, শুকনা খাবার, ছাগলের মাংস, হস্তশিল্প, সিনথেটিক ফেব্রিক্স। এটি মূলত চীনের বাজারে রফতানির জন্য শনাক্ত করা হয়। পাশাপাশি ভারতের বাজারের জন্য শনাক্ত করা হয়, এন হাইড্রোঅক্সাইড অ্যামোনিয়া, লিড এসিড, সবজি, পাট, টেক্সটাইল পণ্য।
.
---------------------------------
★ বিসিআইএম বা নয়া সিল্ক রুট এর কৌশলগত গুরুত্ব কী?
---------------------------------
কালের পরিক্রমায় রাজনৈতিক বিবর্তনে সিল্ক রুট এখন নেই। তবে এশিয়ায় চীনের অভাবনীয় অর্থনৈতিক উত্থানে এবং ভারতে পুঁজি বিকাশের ধারায় সেই সিল্ক রুট নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। মন্দায় আক্রান্ত বিশ্বে এশিয়াকেই আগামীর অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বিবেচনা করা হচ্ছে। ফলে সিল্ক রুট নিয়ে চীনের অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে পশ্চিমারা সরাসরি যুক্ত না হলেও নতুন সিল্ক রুটের ধারণা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে কানেকটিভি জোরদারে এ উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার উদ্যোগের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিপুল কৌতুহলী। যুক্তরাষ্ট্রও উদ্যোগটিকে সমর্থন জানিয়েছে।
.
ঐতিহাসিক সিল্ক রুট কিংবা নতুন সিল্ক রুট যাই বলা হোক না কেন- বৃহত্তর ক্যানভাসে বিবেচনা করলে বিসিআইএমকে ওই কানেকটিভিটির অংশ বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি, ভারত যেভাবে তার এক অংশ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে পণ্য নিতে বাংলাদেশের কাছে ট্রানজিট চাইছে তারও অনেকখানি পূরণ হবে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডরে।
.
চীনের ইউনান প্রদেশের উন্নয়নে এ উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিকল্প নেই প্রদেশটির ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এ বিপুল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে বিযুক্ত রাখতে পারে না। এ বিবেচনায় বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডরের বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে চীন ও ভারতের মতো অর্থনৈতিক শক্তির ভূমিকা এ অঞ্চলের দেশগুলোর বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে থাকে। তাই দুই বড় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ যোগ দিয়ে তার অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে অধিক তথ্য ও জ্ঞান আহরণকে বাংলাদেশ যৌক্তিক মনে করছে।
.
---------------------------------
★ বিশ্বের সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক জোন - সিল্ক রুট:
---------------------------------
১। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরই বাস এই চার দেশে। বিসিআইএম দেশগুলোতে দুই দশমিক আট বিলিয়ন জনগোষ্ঠী বসবাস করছে। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশই কর্মক্ষম।
২। চার দেশের মোট জিডিপি ৫.৭ ট্রিলিয়ন, যা বৈশ্বিক জিডিপির ১০ শতাংশ। অর্থনীতির আকার ১১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৩। চার দেশেই প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। রয়েছে পানি ও জ্বালানি সম্পদ।
৪। এ ছাড়া প্রতিটি দেশেরই আলাদ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- সেবা খাতে বাংলাদেশ ও ভারত অনেক সমৃদ্ধশালী। শিল্পে এগিয়ে চীন। কৃষিতে মিয়ানমার। তাই অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে এক দেশের সম্পদ বা প্রযুক্তি অন্য দেশ ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হতে পারবে।
.
---------------------------------
★ ৪ টি দেশ কী সুবিধা পাবে ?
---------------------------------
পর্যালোচনা করে দেখা যায় 'এ করিডোর তার রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক'। যদিও এখানে কারো অর্থনৈতিক লাভ বেশি কারো কম। বিসিআইএম করিডরের মাধ্যমে ভারত ও চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে। এর মাধ্যমে এ দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতিও কমবে। এত দিন যেসব সমস্যা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান হতো না, এখন সেগুলো আঞ্চলিক পর্যায়ে সমাধান করা সম্ভব হবে।
.
১। চার দেশে সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য বৃদ্ধি:
চার দেশের মধ্যে বাণিজ্য খুবই কম। অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে বাণিজ্য সহজীকরণ ও দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। বিসিআইএম হলে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মায়ানমারের মধ্যে ৫৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। যদি সব দেশের বাণিজ্যনীতি উদারীকরণ হয়। পাশাপাশি বাণিজ্যনীতি পরিমিত উদারীকরণ হলে বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে ৪১০ কোটি মার্কিন ডলারের এবং আংশিক উদারীকরণ হলে বাণিজ্য বাড়বে ২৭০ কোটি ডলার। ওই স্টাডিতে বলা হয়, বিসিআইএম হলে বিসিআইএমের বাইরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য তৈরি হবে সর্বোচ্চ ৩৮০ কোটি মার্কিন ডলার এবং সর্বনিু ১৮০ কোটি ডলারের।
২। অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। এর সুবিধা পাবে চার দেশই। রেল, নৌ, সড়ক ও আকাশ পথেও যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হবে।
৩। বিসিআইএমের মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়বে।
৪। এতে গভীর সমুদ্র বন্দরের উপযোগিতা বহুলাংশে আরও বাড়বে।
৫। বিদ্যুত উত্পাদনের জন্য নদী ও জলপ্রপাত ব্যবহার বাড়বে।
৬। আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে।
৭। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমনে চার দেশ একই প্রযুক্তি ব্যবহার বা আদান-প্রদান করতে পারবে।
৮। একই সঙ্গে আইটি এবং বিনোদনেও পরিবর্তন আসবে।
৯। অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে শিক্ষা, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্যসেবা, খেলাধুলা একাডেমিক শিক্ষা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার হবে।
১০। অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে চার দেশেরই জীবনযাত্রার মান বাড়বে।
১১। কৃষি, সেচ, প্রযুক্তি লেনদেন, শিল্প পার্ক দারিদ্র্য কমাতে সহায়তা করবে।
১২। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও ময়লা শোধানাগার নির্মাণ, সুপেয় পানির ব্যবহারও বাড়বে।
১৩। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়বে।
১৪। একই সঙ্গে পর্যটন খাতও বিকশিত হবে।
১৫। চারটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজীকরণ করা হলে আমদানি ও রফতানি ব্যয় কমবে।
.
---------------------------------
★ কেন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ?
---------------------------------
১। প্রতিষ্ঠার পর ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সার্ক, সাফটা কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এগুলো আমাদের ইচ্ছা অনুসারে মুভ করছে না। এসব যদি কার্যকর হতো তাহলে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রপ্তানি আরও অনেক বেশি হতো। আরেক জোট বিমসটেকেরও করুণ দশা। বিসিআইএমের ওপর তাই অনেক কিছু নির্ভর করছে।
২। বিসিআইএম কার্যকর হলে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য আরো অনেক বেড়ে যাবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়বে। বিসিআইএম বাস্তবায়নের ফলে বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে।
৩। বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তিতে চীনের অবস্থান দ্বিতীয় এবং ভারতের অবস্থান তৃতীয়। এ দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বেশি। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির কারণেই এ দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘাটতি বাণিজ্য রয়েছে। ঘাটতি কমাতে ভারত ও চীন বাংলাদেশকে বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। বিসিআইএম কার্যকর হলে এ বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্যহারে কমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
৪। চীন বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশ চীনকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প গড়ে তোলার সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে বাংলাদেশে চীনের শিল্প খাতে বিনিয়োগ অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
৫। বাংলাদেশ চীন ও ভারত থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলেও মিয়ানমার থেকে পায় না। সে কারণে সে দেশে আমাদের রপ্তানিও সামান্য।শুল্ক বাধা দূর হলে বাণিজ্যও বাড়বে।এই করিডর হলে মিয়ানমারেও রপ্তানি বাড়বে।
৬। বিসিআইএম হলে ভারত-চীনের পর্যটকেরা এ দেশে আরও বেশি আসবে।
বিসিআইএম নিয়ে গবেষণাকারী সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, বিসিআইএমের মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও স্পেশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে।চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাংলাদেশের নানা উদ্যোগ থাকবে। এসব এলাকার উন্নয়নও হবে ব্যাপক। অর্থনীতিও পরিবর্তন হবে।
.
বিসিআইএম প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চার দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। বাংলাদেশের জ্বালানি খাত সমৃদ্ধ হবে। পাশাপাশি দেশে মানবসম্পদ বাড়বে। তাঁর মতে, এই জোটের মধ্য দিয়ে একটি বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এতে সড়ক, রেল, নৌ, বিমানসহ সব খাতেই আধুনিকতার ছোঁয়া লাগবে।
.
বিসিআইএমের মাধ্যমে শুধু পরিবহন যোগাযোগই বাড়বে না, বিনিয়োগও আসবে। এই অঞ্চলে নতুন পর্যটন স্থান গড়ে উঠবে। এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে আঞ্চলিক সরবরাহব্যবস্থায় যুক্ত করবে। তবে এই করিডরের জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এবার নতুন জোট গড়ে সুফল পেতে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডর চালুর জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে।
.
---------------------------------
★ বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হবে?
---------------------------------
১। সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ:
বিসিআইএমে অন্তর্ভুক্ত হলে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৭০ কোটি মার্কিন ডলার (দেশীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা) এবং সর্বনিু ৪০ কোটি ডলারের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা গ্রহণ করবে। বিসিআইএম নিয়ে এশীয় প্যাসিফিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং নেটওয়ার্ক অন ট্রেডের গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই আর্থিক সুবিধার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সংস্থাটি বিসিআইএম হলে কোন দেশ কি সুবিধা পাবে তার ওপর একটি স্টাডি করেছে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে- চারটি দেশের মধ্যে যদি বাণিজ্যনীতি আংশিক উদারীকরণ করে তাহলে সর্বনিু ৩ হাজার ১২০ কোটি টাকার শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।তবে, যে দেশের অর্থনীতির আকার বড় ওই দেশ এই শুল্ক সুবিধা বেশি ভোগ করতে পারবে।
২। বিসিআইএম কার্যকর হলে চীন ও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।
৩। বাংলাদেশের রাজস্ব আয় কমবে না:
বিসিআইএমে অন্তর্ভুক্ত হলে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হারাবে ভারত। অপর দিকে বাংলাদেশের কোনো রাজস্ব ক্ষতি হবে না। বিসিআইএমের অপর তিনটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাজস্ব সুবিধা দিতে গিয়ে ভারতের রাজস্ব বর্তমান আয়ের চেয়ে ৫৪ শতাংশ হ্রাস পাবে। এটি সর্বনিু ৩৬ শতাংশ হতে পারে। অপর দিকে চীনের রাজস্ব কমবে ৫৭ শতাংশ, মিয়ানমারের ৫৫ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ বিসিআইএমে সম্পৃক্ততার পর যে বাণিজ্য সুবিধা পাবে বিপরীতে যা রাজস্ব আয় কমবে উভয় মিলে সমান থাকবে। ফলে বাংলাদেশের কোনো রাজস্ব ক্ষতি হবে না।
৪। কল্যাণমূলক আর্থিক সুবিধায় দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ:
চারটি দেশের মধ্যে কল্যাণমূলক সুবিধার দ্বিতীয় স্থানে থাকছে বাংলাদেশ। বিসিআইএমের মধ্যে কল্যাণমূলক সুবিধা ভোগ করবে ভারত। আর্থিক দিক থেকে এই সুবিধার মূল্যমান হচ্ছে প্রায় ২৭ কোটি মার্কিন ডলার। সবচেয়ে কম সুবিধা পাবে মিয়ানমার। তাদের ক্ষেত্রে কল্যাণমূলক সুবিধার আর্থিক মূল্য হচ্ছে ৫০ লাখ ডলার। তবে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ কল্যাণমূলক আর্থিক সুবিধা ভোগ করতে পারবে ৭ কোটি মার্কিন ডলারের।
৫। চীন ও ভারত থেকে বছরে ১১০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করতে হয়। এসব পণ্য আমদানিতে পরিবহন ব্যয় বড় বিষয়। বিসিআইএমের ফলে পরিবহন ব্যয় অনেক হ্রাস পাবে।
৬। শুল্কের চেয়ে অশুল্ক বাধা বেশি। ফলে বাণিজ্য সহজীকরণ করা হলে অশুল্ক বাধাগুলো দূর হবে।
৭। গভীর সমুদ্র বন্দর হলে এর অবকাঠামো ব্যবহার করা যাবে বিসিআইমের মাধ্যমে।
৮। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে পর্যটন, বিদ্যুত ও গ্যাসের সুবিধা বাংলাদেশ পাবে।
.
---------------------------------
★ বিসিআইএম নিয়ে সরকারের গবেষণাপত্র: অর্থনৈতিক Hub হবে বাংলাদেশ
---------------------------------
চীন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বহুল আলোচিত অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে বদলে যাবে বাংলাদেশের চেহারা। বিকাশমান দুই দেশ ভারত ও চীনের সংস্পর্শে সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সব দিকেই লাভবান হবে দেশ। বিকশিত হবে এই দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। কমবে দারিদ্র্যের হার, সমৃদ্ধ হবে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য। দূর হবে বাণিজ্য বাধা। তিন দেশ থেকেই পাওয়া যাবে জ্বালানি সহযোগিতা। ভৌগোলিক কারণে অন্য তিন দেশ থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। বিসিআইএম নিয়ে তৈরি করা সরকারের এক ধারণাপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
.
গবেষণায় দেখা গেছে, অর্থনৈতিক করিডর চালু হলে জোটভুক্ত চার দেশেই ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহার বাড়বে। আর জ্বালানি ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো বড় আকারে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে। সেখান থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আনতে পারবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।
.
---------------------------------
★ আশঙ্কা, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত:
---------------------------------
বিসিআইএম এর ভবিষ্য নির্ভর করছে চীনের ওপর। বিসিআইএম হলে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া যুক্ত হতে পারবে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তানও যুক্ত হবে।
.
বিসিআইএম নিয়ে তৈরি করা সরকারের এক ধারণাপত্রে কিছু আশঙ্কা এবং উদ্বেগের কথাও আছে। এতে বলা হয়েছে, জোটভুক্ত এই চার দেশের মধ্যে ভারত ও চীন প্রতিযোগী দেশ। উভয় দেশই অর্থনৈতিকভাবে বিকাশমান। আগামী বিশ থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে ভারত ও চীন হবে বিশ্বের পরাক্রমশালী দুটি দেশ। তাই স্বাভাবিকভাবে দুই দেশের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই থেকেই যাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যেও দ্বিপক্ষীয় জটিলতা রয়েছে। রোহিঙ্গা এখনো অমীমাংসিত ইস্যু। এসব জটিলতা উতরাতে পারলে আশিয়ান ও ব্রিকসের মতো বিসিআইএম শক্তিশালী জোট হবে বলে ধারণাপত্রে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
.
---------------------------------
★ প্রতিবন্ধকতা:
---------------------------------
তবে এই করিডর চালু হওয়ার পথে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এর মধ্যে ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধা, দুর্বল বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা এবং প্রথাগত জটিলতা অন্যতম। এ ছাড়া মুদ্রা বিনিময় এবং চার দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা নিয়েও জটিলতা আছে।
.
---------------------------------
★ করণীয়?
---------------------------------
চারটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে পরিবহনব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। ইতিমধ্যে সড়ক পথের রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। রেল ও নৌপথের রুট চিহ্নিত করতে হবে। এজন্য অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিসিআইএমকে কার্যকর করতে দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো গতিশীলভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া, অশুল্ক বাধা দূর করা, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দেন তথ্যমন্ত্রী।
.
---------------------------------
★ উপসংহার:
---------------------------------
আমরা এখন অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের মধ্যে আছি। আমরা যত বেশি দেশের সঙ্গে একত্রে থাকতে পারব, তত উন্নতি করব। বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডর কার্যকর হলে লাভবান হবে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি বাড়বে। এ জন্য বিসিআইএমকে দ্রুত কার্যকর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।




1 comment: