Friday, 15 January 2016

৩৬ লিখিত ২ঃ আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি by Samad Azad [Admin, BCS: Our Goal [Largest Job group of Bangladesh]]

সম্ভাব্য প্রশ্ন: (বড় প্রশ্ন বা টীকা)
১। "উদীয়মান দেশের নতুন উদ্যোগ ব্রিকস ব্যাংক বা New Development Bank" - এর উদ্যোগ ও গঠন সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২। ব্রিকস ব্যাংক গঠনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোকপাত করুন।
৩। বিশ্ব ব্যাংক (WB) ও আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) কি তাহলে এবার সত্যিই প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে যাচ্ছে? আপনি কি মনে করেন তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য কি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি?
৪। ব্রিকস ব্যাংক এর সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত আলোচনা করুন।
৫। ব্রিকস ব্যাংক এর চ্যালেঞ্জ ও এটি নিয়ে আন্তর্জার্তিক রাজনীতি সম্পর্কে আলোকপাত করুন।
.
সম্পর্কিত বিষয় (Related Topics):
আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি (লিখিত) :: International Economic Relations, Global Initiatives and Institutions.
.
=====================
ব্রিকস ব্যাংক বা New Development Bank :: উদীয়মান দেশের নতুন উদ্যোগ
=====================
.
---------------------------------
★ উদ্যোগ ও গঠন
---------------------------------
ব্রিকস নেৃতৃবৃন্দ, অর্থাৎ রাজিল, রাশিয়া, ভারত, গণচীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীগণ ১৫ জুলাই, ২০১৪ ব্রাজিলের ফোর্তালেজা শহরে এক ঐতিহাসিক সভায় মিলিত হন। ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মনোরম এ শহরে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে আলোচনা করেন চার মহাদেশের পাঁচ প্রভাবশালী দেশের নেতারা। তারপর অনেক প্রত্যাশা ও শুভেচ্ছা নিয়ে হাসিমুখে হাতে হাত রাখেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। ওরা ব্রিকস ব্যাংক গঠনের ঘোষণা দিলেন, ব্যাপক প্রতিশ্রুতি ও অপার সম্ভাবনার আশা ব্যক্ত করে।
.
----------------------------------------
★ গঠনের প্রেক্ষাপট
----------------------------------------
বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন, কৌশলগত পরামর্শ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তবে সময়ের পরিক্রমায় আর্থিক ও বাণিজ্যিক ভুবনে বর্তমানে অনেক নতুন শক্তি ও ভাবনারও উত্থান ঘটছে। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন ধারার অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়া স্বাভাবিক। ব্রিকস (BRICS- Brazil, Russia, India, China, South Africa) ব্যাংকের ঘোষণা তেমনই একটি নতুন প্রতিশ্রুতি।
.
----------------------------------------
★ একনজরে ব্রিকস ব্যাংক (প্রয়োজনীয় তথ্য)
----------------------------------------
১. উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো বির্নিমাণে ব্রিকস ব্যাংক কাজ করবে।
২. চীনের বৃহৎ বাণিজ্য নগরী সাংহাইতে অবস্থিত হবে এ ব্যাংকের সদর দপ্তর।
৩. দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকবে এই ব্যাংকের আফ্রিকান আঞ্চলিক সদর দপ্তর।
৪. ব্যাংকের প্রথম প্রেসিডেন্ট হবেন একজন ভারতীয়। (On 11 May 2015, K. V. Kamath was appointed as President of the Bank)
৫. বোর্ড অব গভর্নর্সের প্রথম চেয়ারপারসন আসবেন রাশিয়া থেকে।
৬. আর পরিচালনা পর্ষদের প্রথম প্রধান হবেন একজন ব্রাজিলিয়ান।
৭. এই ব্যাংকের অনুমোদিত মুলধন হবে ১০ হাজার কোটি ডলার, তবে প্রাথমিক মূলধন হবে ৫ হাজার কোটি ডলার। গণচীন দিবে ৪ হাজার একশত কোটি ডলার। ব্রাজিল, ভারত ও রাশিয়া দিবে প্রত্যেকে ১ হাজার আট শত কোটি ডলার করে। ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা দিবে ৫ শত কোটি ডলার।
৮. ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হবে ২০১৬ সাল থেকে।
---------------------------------------------
The New Development Bank (NDB), previously referred to as the BRICS Development Bank, is a multilateral development bank operated by the BRICS states (Brazil, Russia, India, China and South Africa) as an alternative to the existing US-dominated World Bank and International Monetary Fund.
.
---------------------------------------------
★ বিশ্ব ব্যাংক ও আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) কী প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে যাচ্ছে?
তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য কি সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি?
---------------------------------------------
ব্রাজিলের অর্থমন্ত্রী গুইডো মনে করেন, “বিশ্ব ব্যাংকের কর্তৃত্ব বরাবরই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকে। ব্রিকস ব্যাংক হবে গণতান্ত্রিক।”
তাঁর কথা ঠিক হলে বলতে হয়, সম্ভবত একটি ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাংক তার শুভসূচনা করল। এই ব্যাংকের অনুমোদিত মুলধন হবে ১০ হাজার কোটি ডলার, তবে প্রাথমিক মূলধন হবে ৫ হাজার কোটি ডলার। গণচীন দিবে ৪ হাজার একশত কোটি ডলার। ব্রাজিল, ভারত ও রাশিয়া দিবে প্রত্যেকে ১ হাজার আট শত কোটি ডলার করে। ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা দিবে ৫ শত কোটি ডলার। তবে পরিচালনা ও ঋণদান বিষয়ক নিয়মাবলী নিয়ে পর্যায়ক্রমে আরও আলোচনা হবে এবং সিদ্ধান্ত হবে সে অনুযায়ী।
.
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অভিমত হচ্ছে, শুরু থেকেই ‘স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণভাবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে, সকলের অভিমত গ্রহণ করে’ ব্রিকস ব্যাংক তার কাজ পরিচালনা করবে। ওদিকে ব্যাংকের সূচনালগ্নে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফের বক্তব্য হচ্ছে– ‘‘ব্রিকস ব্যাংক এবং সঞ্চিত আমানতের চুক্তিতে আমরা যে স্বাক্ষর করেছি তা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রশাসনের নতুন নকশা প্রদানে মূল্যবান অবদান রাখতে সক্ষম হবে। আমরা একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা চাই ন্যায়বিচার ও সমঅধিকার। আইএমএফকে দ্রুত ভোটাধিকার কোটা পরিবর্তন করতে হবে, উদীয়মান দেশগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে।”
.
উদ্যোক্তারা বলছেন, একটি গণতান্ত্রিক ধারার সূচনা করা এবং সকলের অভিমত গ্রহণ করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা ছাড়াও, বিশ্ব পরিমণ্ডলে নতুন অর্থনৈতিক প্রশাসনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা এর লক্ষ্য। শতাব্দী ধরে আর্থিক বিশ্বে আধিপত্যবাদের অবসানের লক্ষ্যে ব্রিকস ব্যাংকের শুভযাত্রার মাধ্যমে উদীয়মান দেশসমূহ বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ-এর প্রতি অর্থবহ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিবে বলে অনেক পর্যবেক্ষকও মনে করছেন।
.
----------------------------------------
★ ব্রিকস ব্যাংক :: সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত
----------------------------------------
ব্রিকসভুক্ত পাঁচ দেশের মোট জনসংখ্যা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ৪২ শতাংশ। বিশ্বের মোট পুঁজি বিনিয়োগের ১১ শতাংশ এবং বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের ২০ শতাংশ এই পাঁচটি দেশ থেকেই আসে। তাই অর্থনৈতিক প্রজ্ঞাবান দার্শনিকদের ধারণা হচ্ছে, এই ব্যাংকের সম্ভাবনা বিশাল ও ব্যাপক। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ তাদের আধিপত্যবাদের অস্তমিত সূর্যকে এবার অবশ্যই অবলোকন করবে। তাই তাদের এখনই মাথা নত করে প্রতিযোগিতার পরিমণ্ডলে টিকে থাকার লড়াই শুরু করা দরকার।
.
----------------------------------------
★ ব্রিকস ব্যাংক :: চ্যালেঞ্জ ও আন্তর্জার্তিক রাজনীতি
----------------------------------------
অর্থনীতির গতিপ্রবাহ চলে নিজস্ব ধারায়। প্রশ্ন হচ্ছে, কী হারে এ ব্যাংক ঋণ দিবে। বিশ্ব ব্যাংক এখন তৃতীয় বিশ্বে, বিশেষত বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ০.৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ শতাংশেরও কম সুদের হারে। এছাড়াও, বড় ধরনের সুবিধা হচ্ছে, প্রায় চল্লিশ বছর পর, এ ঋণ পরিশোধের তালিকায় আসে। তার মানে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর দ্বারে বিশাল এক সুযোগ উন্মুক্ত করে রেখেছে বিশ্ব ব্যাংক। এ কারণেই বাংলাদেশের জনগণ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বিনা সুদে জাইকার অর্থগ্রহণে উৎসাহ প্রদর্শন করেছে।
.
ব্রিকস অবশ্য এখনও কিছু ঘোষণা করেনি যে, কোন দেশ এবং কী জাতীয় ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধার আওতায় আসবে এবং অবকাঠামো নির্মাণে কেমন শর্তাবলী আরোপিত হবে। এসবই সামনে আলোচনার বিষয় হিসেবে চলে আসতে যাচ্ছে। এছাড়াও, বাংলাদেশ যদি ব্রিকস ব্যাংকের সদস্য হয়, তবে বিনিয়োগের হার কী হবে এবং ভোটাধিকার থাকবে কিনা, সবই ভবিষ্যত বলে দিবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকের পরিচালনায় বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের ভূমিকা পালন করছে এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের গভর্নিং বডির সদস্য।
.
মূলত একটি ব্যাপক প্রতিযেগিতার সূত্রপাত করতে যাচ্ছে ব্রিকস ব্যাংক। বিশ্ববাসী অবশ্যই দেখবে অথনৈতিক সম্প্রসারণবাদের অবসান অবশ্যম্ভাবী। তাতে উদীয়মান অর্থনীতির দেশসমূহ বিশ্ব অর্থনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করবে।
তাই গোল্ডম্যান গ্রুপের জোহানসবার্গ শাখার প্রধান কলিন কোলম্যান মনে করেন, “কূটনৈতিক ও আর্থিকভাবে আমরা এখন বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উদীয়মান বাজারের অংশীদার। আমরা তৃতীয় বিশ্বের আমজনতা। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার, এ সব ব্যাপারে আমাদের প্রতিবাদী কণ্ঠ তীব্র ও কঠোর। আমরা পরিশ্রম করে অগ্রগতি অর্জন করব, কারও অঙুলির নির্দেশনা মানতে আমরা রাজি নই।”
.
তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এ জাতীয় অর্থনৈতিক উদ্যোগ কীভাবে প্রভাবিত করে তা বুঝে উঠা কঠিন। রাশিয়ার উপর যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে যাচ্ছে। ইউক্রেন প্রশ্নে ভারত, গণচীন ও ব্রাজিল নিরব থাকলেও সকলের ভাবনা এক নয়। মালয়েশিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে ১৭ জুলাই বিকাল ৫ টায় এবং ২৯৮ জন আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে বিমানটি ভূপাতিত করেছে। এ নিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতি এখনও ঘোলাটে। ওদিকে ব্রাজিলের নির্বাচন সামনে। দিলমা রৌসেফ যদি নির্বাচনে জিতে আসতে না পারেন, পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে বলা কঠিন।
.
এভাবে রাজনৈতিক অঙ্গন ভিন্নরূপ নিতে চলেছে। তাই প্রশ্ন থেকে যায়, এ সকল রাজনৈতিক ব্যতিক্রমধর্মী কর্মকাণ্ড ব্রিকস ব্যাংকের মহান উদ্যোগে প্রভাব বিস্তার করে তার অভীষ্ট পূরণে সহায়তা করবে কিনা। ভবিষ্যতই সেটা বলে দিবে।
.
উপসংহার:
বিশ্ব পরিমণ্ডলে অর্থনৈতিক প্রশাসনে প্রতিযোগিতা তীব্র হলে এবং অর্থনৈতিক ভুবনে আধিপত্যবাদবাদের অবসান হলে, বিশ্বে বৈষম্য হ্রাস পাবে। তাই আজকের প্রত্যাশা, নতুন ব্যাংকের যাত্রা শুভ হোক। 



No comments:

Post a Comment