লিখিত প্রস্তুতি :: বাংলাদেশ বিষয়াবলি + আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি
সম্ভাব্য প্রশ্ন:
১. স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) কী? স্বল্পোন্নত দেশ কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
২. স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) এর সামগ্রিক অবস্থা মূলায়ন করুন।
৩. স্বল্পোন্নত দেশ/ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উঠে আসার জন্য জাতিসংঘের নির্ণায়কগুলো কী কী?
৪. এলডিসি গ্রুপ (LDC Group) কি? এর সদস্য সংখ্যা কত?
৫. বাংলাদেশ সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (WTO) স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসির সমন্বয়ক নির্বাচিত হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে? এলডিসির স্বার্থে বাংলাদেশ আর কী ভূমিকা পালন করতে পারে?
৬. এশিয়ার এলডিসি ও আফ্রিকার এলডিসির স্বার্থের মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে? এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কীভাবে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে?
৭. বাংলাদেশের এখনও এলডিসিতে থাকার কারণ কী? বাংলাদেশের এলডিসি থেকে বের হতে কত সময় লাগবে?
৮. বাংলাদেশের এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবার পক্ষে-বিপক্ষে কী যুক্তি রয়েছে?
৯. এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন এবং আপনি কি মনে করেন মধ্যম আয়ের দেশ হলেই বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসবে ?
১০. এলডিসিতে বাংলাদেশের অবস্থান, চ্যালেঞ্জ, করণীয় ও সুপারিশ সম্পর্কে আপনার মতামত পেশ করুন।
.
=====================
সম্পর্কিত বিষয় (Related Topics): সিলেবাসে একাধিকবার উল্লেখকৃত ।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি:
Economy, Foreign Policy and External Relations of Bangladesh (Participation in International Organizations), International Economic Institutions, International Trade.
.
আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি:
Participation in International Organizations, International Economic Institutions, International Economic Relations, International trade, WTO. Bangladesh in International Affairs (Major achievements, challenges, future directions)
Section C : Problem-solving (International Trade issue)
=====================
.
কেন প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মনে হচ্ছে ??
১. এলডিসি থেকে উত্তরণে কাজ করার জন্য গত ২২ ডিসেম্বর ‘সমন্বয় ও পরিবীক্ষণ’ কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ ছাড়া সরকারের আরো ২৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের ওই কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে।
.
২. বাংলাদেশ সম্প্রতি পঞ্চমবারের মতো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসির সমন্বয়ক নির্বাচিত হয়েছে।
=====================
.
---------------------------------
★ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) :
---------------------------------
১৯৭১ সাল থেকে জাতিসংঘ বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে আলাদা তালিকায় রেখেছে। উন্নয়ন-প্রক্রিয়া কার্যত স্থবির, দারিদ্র্যহার কমানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, ঝুঁকির তীব্রতা বিবেচনায় এ তালিকা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিদেশি ঋণ ও অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থা ও উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে এ ধরনের দেশকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার নীতি ও সিদ্ধান্ত রয়েছে জাতিসংঘ, ডাব্লিউটিওসহ নানা আন্তর্জাতিক সংস্থায়। এসব দেশ নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান আঙ্কটাডের নেতৃত্বে ১৯৮১, ১৯৯০, ২০০১ ও ২০১১ সালে চারটি সম্মেলন হয়েছে। সর্বশেষ ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এলডিসির অভিধা থেকে বের হওয়ার জন্য কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় পায় দেশগুলো।
.
বর্তমানে এলডিসিভুক্ত দেশ আছে ৪৮টি। ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র চারটি দেশ এলডিসি থেকে বের হতে পেরেছে। দেশগুলো হলো বতসোয়ানা, কেপ ভারদে, মালদ্বীপ ও সামোয়া।
.
---------------------------------
★ স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
---------------------------------
তিনটি সূচকের ওপর ভিত্তি করেই স্বল্পোন্নত দেশ নির্ধারণ করা হয়:
১. মাথাপিছু আয়
২. মানবসম্পদ উন্নয়ন
৩. অর্থনীতির ভঙ্গুরতা
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে এই দেশগুলোর মাথাপিছু আয় এক হাজার ১৯০ ডলার, মানবসম্পদ সূচক ৬৬ এবং অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচক ৩২ হতে হবে।
.
---------------------------------
★ স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) এর সামগ্রিক অবস্থা মূলায়ন :
---------------------------------
বিশ্বব্যাংকের এক হিসাব অনুযায়ী, ৪৮টি এলডিসির মধ্যে বিশ্বের ৮৫ কোটি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে অর্ধেকেরই অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ, পণ্য বাণিজ্যের ১ শতাংশ এবং সেবা বাণিজ্যের মাত্র দশমিক ৫ শতাংশের ভাগীদার এলডিসিভুক্ত দেশগুলো। ডব্লিউটিওর অধীনে বাণিজ্য স্বার্থসম্পর্কিত বাংলাদেশসহ যে ৩৪টি এলডিসি রয়েছে, এদের অবস্থা আরও খারাপ।
.
---------------------------------
★ স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উঠে আসার জন্য জাতিসংঘের নির্ণায়কগুলো কী কী?
---------------------------------
এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উঠে আসার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ৩ টি শর্ত রয়েছে:
.
১ম শর্ত:
তিন বছরের গড় মোট দেশজ আয়ের (জিএনআই) ভিত্তিতে মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১১৯০ ডলার হতে হবে। তবে সর্বনিম্ন মাথাপিছু আয়ের এ অঙ্ক প্রতিবছরই বাড়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ১০৪৪ ডলার।
.
২য় শর্ত:
হলো-মানবসম্পদের উন্নয়ন। এ ক্ষেত্রে পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নকে মূল্যায়ন করে জাতিসংঘ।
.
৩য় শর্ত:
ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা দূর করা। এটি কৃষি উৎপাদন, পণ্য ও সেবা রপ্তানি, প্রচলিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও জিডিপিতে সম্পূর্ণ পণ্য উৎপাদন ও আধুনিক সেবার অংশীদারিত্ব এবং ছোট অর্থনীতির প্রতিবন্ধকতা দূর করার ওপর নির্ভর করবে।
.
---------------------------------
★ অর্থাৎ এলডিসি দেশগুলো মূলত তিন ভাবে এখান থেকে বের হয় :
---------------------------------
প্রথমত, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করে, যেমন করেছে মালদ্বীপসহ দ্বীপরাষ্ট্রগুলো।
দ্বিতীয়ত, অর্থনীতিকে বহুমুখীকরণ করা (যেমন বিভিন্ন ধরনের শিল্প খাতকে সহায়তা দেওয়া, যেন তারাও ভূমিকা রাখতে পারে)।
তৃতীয়ত, অর্থনীতিকে বিশেষায়িত করা (যেমন কোনো ক্ষেত্রে একটি বিশেষ খাতকে ধরে এগিয়ে যাওয়া)।
.
---------------------------------
★ এলডিসি গ্রুপ (LDC Group) কি?
এর সদস্য সংখ্যা কত?
---------------------------------
বর্তমানে ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে ৩৪টি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) এর সদস্য। আর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিওতে) এই ৩৪টি দেশের দল বা গ্রুপটিকেই "এলডিসি গ্রুপ" বলে।
.
বাংলাদেশের বিশ্ব বাণিজ্যে নিজেদের হিস্যা আদায়ের কৌশল নির্ধারণে ১৯৯৫ সালে ডব্লিউটিওর যাত্রা শুরুর পরপরই গঠিত হয় এ দল। ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে ডব্লিউটিওর সদস্য ৩৪টি দেশই হলো এলডিসি গ্রুপের সদস্য। উল্লেখ্য যে, আরও ৮টি দেশ ডব্লিউটিওর সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
.
---------------------------------
★ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসির সমন্বয়ক বাংলাদেশ :
---------------------------------
বাংলাদেশ পঞ্চমবারের মতো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসির সমন্বয়ক মনোনীত হয়েছে। সম্প্রতি এলডিসি গ্রুপের এক সভায় বাংলাদেশকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী ছয় মাস বাংলাদেশ এ দায়িত্ব পালন করবে। তবে মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়তে পারে। এর আগে বাংলাদেশ ১৯৯৬, ২০০৩, ২০০৬ এবং ২০১০ সালেও এলডিসির সমন্বয়ক ছিল। সমন্বয়ক ছাড়াও এলডিসিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সব সময়ই নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করে আসছে।
.
ডব্লিউটিওতে এলডিসির সমন্বয়ক নির্বাচিত হয় যদিও দেশের নামের আদ্যক্ষরের ক্রম অনুযায়ী (অ্যালফাবেটিক্যালি), তবে সব এলডিসিরই ৩৪টি দেশের সমন্বয়ক হওয়ার সক্ষমতা নেই। ডব্লিউটিওতে ১২টি স্বল্পোন্নত দেশের কোনো অফিসই নেই। জেনেভাতে বাংলাদেশের যেমন একটি স্থায়ী মিশন রয়েছে, দেশেও রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি ডব্লিউটিও সেল। মোটকথা, এলডিসির মধ্যে বাংলাদেশের একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে। তা ছাড়া শুরু থেকেই বাংলাদেশ ডব্লিউটিওকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ১৯৯৫ সালে ১২২টি সদস্য নিয়ে সংস্থাটি যখন গঠিত হয়, তখন থেকেই বাংলাদেশ সদস্য। বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার মধ্যে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সীমিত সাধ্যের মধ্যেও চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
.
---------------------------------
★ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) এলডিসির সমন্বয়ক হিসেবে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে?
---------------------------------
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) এলডিসি গ্রুপের সমন্বয়ক হওয়ার বড় লাভ হচ্ছে উন্নত দেশগুলোর কাছে এলডিসির দাবি ও অধিকার আদায়ে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ। অর্থাৎ স্বল্পোন্নত ৪৮ দেশের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার সুযোগ তৈরি হলো বাংলাদেশর ।
.
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন,
‘উন্নত দেশগুলোতে এলডিসির শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্য রপ্তানির দাবিতে বাংলাদেশ সব সময়ই উচ্চকণ্ঠ। আবারও সময়ন্বক হওয়ায় এ দায়িত্ব আরও বাড়ল।’
.
এলডিসির উন্নয়নে ডব্লিউটিওতে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক (গ্রিনরুম মিটিং) অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, যেগুলোতে শুধু সমন্বয়ক দেশের প্রতিনিধিই উপস্থিত থাকতে পারে। বাংলাদেশের স্বার্থের বাইরে চলে যেতে পারে—এ রকম কোনো বিষয় কোনো বৈঠকে উপস্থাপিত হলে, বাংলাদেশ তখন তা নিয়ে কথা বলতে পারবে। শুধু শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্য রপ্তানি নয়, সেবা খাতে বাজার পেতেও নিজেদের অধিকার, সুযোগ ও স্বার্থের বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান ও সক্ষমতার কারণে এলডিসির অনেক সদস্যই আমাদের ঈর্ষার চোখে দেখে।
.
---------------------------------
★ এলডিসির স্বার্থে বাংলাদেশ আর কী ভূমিকা পালন করতে পারে?
---------------------------------
উন্নত দেশগুলো তাদের জাতীয় আয়ের শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ সহায়তা (এইড) হিসেবে দরিদ্র দেশগুলোকে দেওয়ার কথা। জাতিসংঘের কাছে তাদের স্বীকারোক্তি ছিল। অনেক দিন থেকেই আমরা বলছি, এ থেকে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ যাতে এলডিসিগুলো পায়। নরওয়েসহ কোনো কোনো দেশ অবশ্য তা মানছে। এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ তার কণ্ঠস্বর আরও জোরালো করতে পারে।
.
---------------------------------
★ এশিয়ার এলডিসি ও আফ্রিকার এলডিসির স্বার্থের মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে?
---------------------------------
সমন্বিত অধিকার আদায়ের ব্যাপারে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে দর-কষাকষি চললেও এশিয়ার এলডিসি ও আফ্রিকার এলডিসিগুলোর মধ্যে সব সময়ই একটা প্রতিযোগিতা বা মতবিরোধ থাকে। মহাদেশভেদে স্বার্থের বিষয়গুলো ভিন্ন বলেই এ প্রতিযোগিতা। এশিয়ার এলডিসির প্রধান স্বার্থের জায়গা হলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারসহ তৈরি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধি।আর আফ্রিকার এলডিসির প্রধান স্বার্থ হলো কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে নিরঙ্কুশ ও শর্তমুক্ত প্রবেশাধিকার।
.
---------------------------------
★ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কীভাবে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে?
---------------------------------
বাংলাদেশের ওপর সব এলডিসির একধরনের আস্থা রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে—আমাদের রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এবং মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বাণিজ্যের অংশ। বাংলাদেশকে এসব দিক থেকে অন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলো যথেষ্টই সমীহ করে। উন্নত দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের প্রধান চাওয়া হচ্ছে পণ্য বাণিজ্যে বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার। আর আফ্রিকার এলডিসির অন্যতম চাওয়া হচ্ছে কৃষি। বাংলাদেশের প্রতি সবার এ রকম একটি আস্থা রয়েছে যে বাংলাদেশ দুইয়ের মধ্যে একটি সুষম ভাব নিয়ে আসতে সক্ষম। আর আফ্রিকার এলডিসিদের আমরা বলতে পারি যে আমাদের শিল্পে তোমরা সমর্থন দাও, তোমাদের কৃষিতেও আমরা তা দেব।
.
এলডিসির জন্য একটা বড় সম্ভাবনা হচ্ছে সেবা খাতের বাণিজ্যে ছাড় (সার্ভিস ওয়েভার)। অর্থাৎ এলডিসি থেকে উন্নত দেশগুলোতে বেশি হারে ও শিথিল শর্তে সেবা খাতের বাজার উন্মুক্ত হওয়া। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে উন্নত দেশগুলো এ বিষয়ে তাদের প্রতিবন্ধকতার কথা ডব্লিউটিওকে জানাবে। একটা হিসাবে এসেছে, উন্নত দেশগুলো তাদের ৩ শতাংশ শ্রমবাজার উন্মুক্ত করলে এলডিসির জন্য ১৫ হাজার কোটি ডলারের বাজারের সুযোগ তৈরি হয়।
.
সেবা খাতের বাণিজ্যে ছাড় উন্নত দেশগুলো ১, ২ বা ৫ বছর পরেও যদি দেয়, সেই সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। বাজার উন্মুক্ত হলেই যাতে সুযোগটি নেওয়া যায়। এ ব্যাপারে গবেষণারও দরকার রয়েছে। কয়েকটি খাতকে অবশ্য এর মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আমাদের সবার আগে নজর দিতে হবে নার্সিং ও দক্ষ জনশক্তি—এ দুই খাতে। এর মধ্যে সনদটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গেল, একজন নার্সিং পাস করলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর সনদ উন্নত দেশগুলো গ্রহণ করল না। সে জন্য এখন থেকেই সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে এগোতে হবে, যাতে শিক্ষার মানটা ভালো হয়, উন্নত দেশের কাছাকাছি হয়।
.
---------------------------------
★ বাংলাদেশের এখনও এলডিসিতে থাকার কারণ কী?
---------------------------------
বাংলাদেশের এখনও এলডিসিতে থাকার বড় একটি কারণ হলো বিপুল জনসংখ্যা। ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে মাথাপিছু আয় এখন ১০৪৪ ডলার। আয়তন বিবেচনায় জনসংখ্যা পাঁচ কোটি হলে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণও দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেত। একই সঙ্গে মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অনেক অগ্রগতি হতো। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য কাজ করছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এলডিসি অভিধা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
.
---------------------------------
★ বাংলাদেশের এলডিসি থেকে বের হতে কত সময় লাগবে?
---------------------------------
এলডিসি থেকে বের হয়ে আসতে হলে তিনটি সূচকেই উন্নয়ন করতে হয়। এর মধ্যে টানা তিন বছরের মাথাপিছু গড় আয়ের পরিমাণ হতে হবে ৯৯২ মার্কিন ডলার। উচ্চ পর্যায়ে তা হতে হবে ১ হাজার ২৪২ ডলার। এভাবে পরপর দুই মেয়াদে অর্থাৎ ৬ বছর পর্যন্ত এই সক্ষমতা অর্জন করতে হয়। এরপর এক মেয়াদ অর্র্থাৎ ৩ বছর গ্রেস পিরিয়ড ধরা হয়। সবমিলিয়ে সক্ষমতা অর্জনের ৯ বছর পর কোনো দেশকে এলডিসি থেকে বাদ দেয়া হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১১৯০ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৪ দশমিক ৭ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ দশমিক ৪। খুব দ্রুতগতিতে আগালেও ২০২৫ সালের আগে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না। খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ২৬ বছরে এলডিসি থেকে বের হয়ে এসেছে।
.
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) :
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সংস্থাটির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের বের হওয়া সম্ভব নয়। আগামীকালও যদি বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার শর্ত পূরণ করে, তাহলেও ছয় বছরের আগে এখান থেকে বের হতে পারবে না। কারণ তিন বছর করে ছয় বছর বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। এলডিসি দেশগুলোর অবস্থা তিন বছর পর পর মূল্যায়ন করা হয়। পরবর্তী মূল্যায়ন হবে ২০১৫ সালে। ওই বছরের তালিকায় বাংলাদেশ বিবেচনায় নেই। এর পরের তালিকায় (২০১৮ সাল) যদি থাকে, তাহলেও অন্তত এক দশকের আগে এলডিসি থেকে বের হতে পারছে না বাংলাদেশ।“
.
আংকটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী,
২০১৪ সালের হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১১৯০ডলার, মানবসম্পদ সূচক ৫৪ দশমিক ৭ এবং অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচক ৩২ দশমিক ৪। প্রসঙ্গত, অন্য দুই সূচক বাড়লে তা ভালো। অন্যদিকে অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচক কমলে তা ওই দেশের জন্য ভালো। আবার ২০১৫ সালে যে মূল্যায়ন হবে, তাতে এলডিসি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে অ্যাঙ্গোলা ও কিরিবাতিকে সম্ভাব্য দেশ মনে করা হচ্ছে।
.
আংকটাডের এলডিসি প্রতিবেদনটি বলছে,
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ২ শতাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। উৎপাদনশীল খাত থেকে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সেবা খাত থেকে আসে ৩২ শতাংশ। অথচ দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশই হয়েছে কৃষি খাতে। আর শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। কৃষি খাতে নিয়োজিতদের আয় যেমন কম, তেমনি উৎপাদনশীলতাও কম। এ খাত থেকে যত বেশি লোককে উৎপাদনশীল খাতে নেওয়া যাবে, তাদের উৎপাদন ও আয় তত বাড়বে।
.
---------------------------------
★ বাংলাদেশের এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবার বিপক্ষে যুক্তি :
---------------------------------
এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশ যেসব সুবিধা হারাবে তা হলো :
১. জিএসপি সুবিধা হারানোর আশঙ্কা :
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা-জিএসপি পেয়ে থাকে।এলডিসি পরিচয় ঘুচে গেলে জিএসপি সুবিধাসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনেক সুযোগই হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে।
.
২. শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার-সুবিধা হারানোর আশঙ্কা :
ডব্লিউটিওর আওতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শতভাগ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার-সুবিধা দিচ্ছে উন্নত দেশগুলো। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ কয়েকটি এলডিসিকে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়নি। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার-সুবিধা হারাবে।
.
৩. বাংলাদেশের রপ্তানি কমবে :
ডব্লিউটিওর আওতায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ কোনো রকম শুল্ক ছাড়াই নিজেদের পণ্য রপ্তানি করতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপানসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে বাংলাদেশও এ ধরনের সুবিধা ভোগ করছে। উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হলে এসব সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। এতে ওই সব দেশের আমদানিকারকদের বাড়তি শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য কিনতে হবে। ফলে দেশগুলোর বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের দাম বাড়বে। এতে ওই সব দেশে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা কমবে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিও কমবে।
.
৪. ঋণের সুদের হার বাড়বে :
এলডিসির সদস্যগুলো উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে কম সুদে ঋণও পায়। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে বাণিজ্যিক সুদের হারে ঋণ নিতে হবে। কিন্তু এখনই অনেক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক হারে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। আর কম সুদের ঋণ এলডিসি হিসেবে দেওয়া হয় না। দেওয়া হয় নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে। এখন আমরা যদি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হই, তাহলেও কিন্তু সুদের হার বেড়ে যাবে।
.
তাই অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত না করে উন্নয়নশীল দেশের পরিচিতি অর্জন করলে বাংলাদেশের লোকসান অনেক। তবে উন্নয়নের মাধ্যমে অগ্রগতি সাধন করার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হলে তখন এসব সুবিধা না থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না। তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এখনো সে অবস্থায় যায়নি।
.
---------------------------------
★ বাংলাদেশের এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবার পক্ষে যুক্তি :
---------------------------------
এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা পায়। তবে বিশ্বব্যাপী এখন শুল্ক কমছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মাধ্যমে যেমন শুল্ক কমানো হয়, তেমনি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যকার শুল্কহার কমে যাচ্ছে। তাই অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা এমনিতেই দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে আরও কমে যাবে। কিন্তু বাজারসুবিধা হারানোর ভয়ে এলডিসি হয়েই থাকা সুবিবেচিত নয়।
.
এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে হয়তো বাংলাদেশের কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকবে না। তবে সুযোগ-সুবিধার আশায় চিরদিন তো আর গরিব হয়ে থাকা যায় না। এলডিসি অভিধা থেকে উত্তরণ ঘটলেই যে জিএসপি সুবিধা থাকবে না, এমনটি নয়। কারণ, অনেক উন্নয়নশীল দেশও রপ্তানির ক্ষেত্রে এ সুবিধা ভোগ করছে।
.
এলডিসি হওয়ার কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনামহানি হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হলে সুনামের পাশাপাশি বিনিয়োগ, বাণিজ্যে নতুন কিছু সুবিধাও পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিদেশিদের আস্থা বাড়বে। তাই যত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসবে, ততই মঙ্গল। কারণ, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন আগে থেকেই আমাদের সামনে রয়েছে।
.
---------------------------------
★ মধ্যম আয়ের দেশ হলেই কী এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ :
---------------------------------
দুনিয়ার কাছে গরিব বা স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) পরিচয়ে আর থাকতে চায় না বাংলাদেশ। গরিব দেশগুলো নিয়ে করা জাতিসংঘের এলডিসি তালিকা থেকে বের হয়ে ‘উন্নয়নশীল দেশ’-এর খেতাব পেতে তৎপর ঢাকা। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসব দেশের অনেক পেছনে বাংলাদেশ। তা সত্ত্বেও উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। তবে আর্থ-সামাজিক খাতে উন্নতি করে শর্ত পূরণের মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছতে পারলে তা বড় সফলতা হবে।
.
মধ্যম আয়ের দেশ হলে এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ এই ধারণাটি সঠিক নয়। মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শুধু একটি দেশের আয় বাড়ে, কিন্তু অন্যান্য সূচকে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এ অবস্থায় অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া যদি আয় বাড়ানোর দিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়, তাহলে হয়তো মানুষের আয় বাড়বে, কিন্তু অর্থনীতির বড় সমস্যাগুলো কাটবে না।
.
সাম্প্রতিক সময়ে মাথাপিছু আয় কিছু বাড়লেও জিডিপি বাড়েনি। কারণ হল রেমিটেন্সের কারণে জাতীয় আয় বেড়েছে। এছাড়া মাথাপিছু আয় হিসাব করা হয় ডলারে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য স্থিতিশীল। আর ডলারের মূল্য বাড়লে মাথাপিছু আয় কমবে।
.
বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে এলডিসি থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব নয়। কারণ বিশাল জনসংখ্যা। ফলে গড় আয় বাড়লেও সবার আয় বাড়ে না। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এবং মানবসম্পদ সূচকে আগাতে হবে।
এলডিসিতে বাংলাদেশের অবস্থান ও চ্যালেঞ্জ :
.
জাতিসংঘের মাপকাঠি অনুযায়ী, বিশ্বের অন্য ৪৮টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও রয়েছে এলডিসির তালিকায়। আপাতত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা কিছুটা ভালো। শীর্ষ কয়েকটি দেশের মধ্যে রয়েছে দেশটি। এমডিজি অর্জনে এগিয়ে বাংলাদেশ। এছাড়া রফতানি এবং রেমিটেন্সে আয়ের অগ্রগতি হয়েছে। তবে দুষ্টচক্রে এখনও রয়েছে বাংলাদেশ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা দৃশ্যমান। বিশেষ করে কর্মসংস্থান এবং আয় সৃষ্টিতে পিছিয়েছে বাংলাদেশ।
.
প্রথমত, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান। যতটুকু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, তা অপ্রাতিষ্ঠানিক। উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। প্রতি বছর ২৫ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে আসছে। ২০১২ সালে মোট জনসংখ্যার ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ কৃষি খাতে, ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ শিল্পে এবং ৩২ শতাংশ ছিল সেবা খাতে। কিন্তু জিডিপিতে অবদানের দিক থেকে একেবারে উল্টো। মোট জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ৫১ শতাংশ, শিল্পের ৩১ এবং কৃষি খাতে ১৭ শতাংশের কিছুটা বেশি। এর অর্থ হল প্রবৃদ্ধি বাড়লেও ওই অনুপাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না।
.
দ্বিতীয়ত, দেশের রফতানি আয় বাড়লেও তা গার্মেন্ট খাতের ওপর নির্ভরশীল। ফলে বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে কোনো ধরনের ভঙ্গুরতা নেমে এলে এ খাতে বিপর্যয় হতে পারে।
.
তৃতীয়ত, আমাদের মজুরি এবং উৎপাদনশীলতা কম। ফলে সামষ্টিকভাবে আয় বাড়লেও তার বণ্টন সঠিকভাবে হয় না। এছাড়াও পুঁজির জোগানে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ঋণখেলাপি এবং বিভিন্ন স্ক্যামের কারণে পুঁজি সহজলভ্য নেই। প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর করে বিশ্বের কিছু দেশের আয় বেড়েছে। কিন্তু তাদেরও আর্থিক কাঠামোতে পরিবর্তন আসেনি।
.
---------------------------------
★ আমাদের করণীয় কী?
---------------------------------
শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, আমদানি-রপ্তানি, রাজস্ব সংগ্রহ—সবদিক থেকেই বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব বাণিজ্যে নিজেদের অংশগ্রহণ ও হিস্যা বাড়াতে বাণিজ্যবিষয়ক জ্ঞান আহরণে এখন পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমে (কারিকুলাম) বাণিজ্য, বাণিজ্য আইন ততটা গুরুত্বের সঙ্গে পড়ানো হয় না। বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) নামে একটি সংস্থা রয়েছে, সেটিও অবহেলিত। বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ে বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার দরকার।
.
জনসংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে এলডিসি থেকে বের হওয়া বাংলাদেশের জন্য বেশ কঠিন। সে ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচকে ভালো করা সহজ।
.
দেশের অর্থনীতিকে ভালো করতে না পারলে মানুষের সুশিক্ষা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যাবে না। আবার সুশিক্ষা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা না গেলে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। এটা একধরনের দুষ্টচক্র। সে কারণে অর্থনীতির স্বার্থেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
.
---------------------------------
★ সুপারিশ :
---------------------------------
অর্থনৈতিক কাঠামোতে গুণগত পরিবর্তন করা ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর টেকসই উন্নয়নের জন্য লক্ষ্যের সঙ্গে নীতির সমন্বয় জরুরি। এক্ষেত্রে কার্যকর শিল্প, বাণিজ্য, রাজস্ব এবং মুদ্রানীতি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
.
টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। যে কোনোভাবে হোক উদ্যোক্তাদের মূলধনের জোগান দিতে হবে। সরকারি ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়নসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর দেয়া প্রতিশ্র“তি রক্ষা, আর্থিক খাতের সংস্কার, সুশাসন নিশ্চিত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
.
---------------------------------
★ LDC s (Least developed countries)
---------------------------------
According to the United Nations,
A least developed country (LDC) is a country that, exhibits the lowest indicators of socioeconomic development, with the lowest Human Development Index ratings of all countries in the world.
.
“A country that is considered lacking in terms of its economy, infrastructure and industrial base. The population of a lesser-developed country often has a relatively low standard of living, due to low incomes and abundant poverty. A lesser-developed country is usually poor, as measured by per capita gross domestic product, and un-modernized. LDCs rely primarily on agriculture as a source of income and industrial practices usually contribute to less than 10% of the nation's GDP.” (Ref: INVESTOPEDIA)
.
The concept of LDCs originated in the late 1960s and the first group of LDCs was listed by the UN in its resolution 2768 (XXVI) of 18 November 1971. A country is classified as a Least Developed Country if it meets three criteria:
.
===================